দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়কে নৈরাজ্য, থামছে না মৃত্যুর মিছিল

Passenger Voice    |    ০২:৩০ পিএম, ২০২৪-০৪-১৭


দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়কে নৈরাজ্য, থামছে না মৃত্যুর মিছিল

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক-মহাসড়কে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। সাধারণ যাত্রী ও ভুক্তভোগীদের মতে, থ্রি-হুইলার, ট্রাক-পিকআপে যাত্রী পরিবহণ, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সড়ক সংস্কারে ধীরগতি, প্রশাসনের নজরদারির অভাব ইত্যাদি কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এই সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব।

মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের সদর উপজেলার কানাইপুরের তেঁতুলতলা নামক স্থানে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় বাসযাত্রীরা আহত না হলেও পিকআপের ১৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন।

জানা যায়, ফরিদপুর-মাদারীপুর অঞ্চলে ৯৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে এই মহাসড়ক পথে সাড়ে তিনশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চার শতাধিক নিহত এবং ৫০০ জন আহত হয়েছেন। বেপরোয়া চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ প্রায় ২০ কোটি টাকার অধিক জরিমানা আদায় করেছে। তারপরও কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। পদ্মা সেতু চালুর পর এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, এসব মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে ও ট্রাফিক নিয়ম না মেনে যানবাহন চালানোর অপরাধে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ ২০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা আদায় করেছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা গোলাম মোহাম্মদ নাসির বলেন, ২২টি জাতীয় মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ থ্রি-হুইলার (নসিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল) চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এসব অবৈধ যান অবাধে চলাচল করছে। এটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের আঞ্চলিক ও দূরপাল্লায় পরিবহণ চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো-ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা। মহাসড়কগুলো বাঁক থাকায় সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। রাস্তার পাশে হাট-বাজার স্থাপন এবং ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার কারণ।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা জোবায়ের জাকির বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকরাই যে দায়ী তা কিন্তু নয়। যাত্রী, পথচারী, রাস্তার পাশের দোকান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

কয়েকজন পরিবহণ চালক জানান, অনেক দুর্ঘটনা ঘটে রাস্তার কারণে। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা হয়। ছোট যানবাহনগুলো আইন না মেনে রাস্তায় এলোমেলোভাবে চলাচল করে। এগুলোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার ওপর হাটবাজার, রাস্তায় গাড়ি আছে কিনা, তা না দেখেই পারাপারের প্রবণতা দেখা যায়। এগুলোও দুর্ঘটনার কারণ। অথচ সব দায় চাপানো হয় চালকের ওপর।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) তুহিন লস্কর জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফরিদপুরের আওতাধীন সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৫ হাজার ৫৯৩টি মামলা হয়। এর থেকে ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ১০ হাজার রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরবাইক জব্দ ও রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, মঙ্গলবারের দুর্ঘটনা কবলিত পিকআপ চালকের হয়তো কোনো লাইসেন্সই ছিল না। এজন্য যখন কেউ কোনো পরিবহণে উঠবেন, নিজের দায়িত্বশীলতা থেকেই জেনে নেবেন, গাড়িটি চলাচলের উপযোগী কিনা কিংবা চালকের বৈধতা আছে কিনা।

প্যা/ভ/ম